মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০১৪

পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত-জীবন্ত পাথর (পাথর কেটে বানানো বিশাল মূর্তি)

জ আপনাদের নিয়ে যাব এমন কিছু জাযগায় যেখানে আমাদের সভ্যতা থেমে যায়, কাল থেমে যায়। শুধু থেকে যায় একরাশ বিশ্ময়। আপনি বলতে বাধ্য হবেন যে ” এও কি সম্ভব?। কথা না বাড়িয়ে চলুন ঘুড়ে আসে তেমন কিছু জায়গায়।

(Great Sphinx of Giza)

Great Sphinx of Giza

আধুনিক কায়রো কাছাকাছি একটি মানুষের মাথার সাথে সিংহের শরীরের এই অদ্ভুত পাথরের মূর্তিটি নীল নদের পশ্চিম তীরে গিজা মালভূমির উপর যে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম এই প্র্রস্তরস্তম্ভ মূর্তিটি ৭৩.৫ মিটার দীর্ঘ (২৪১ ফুট), ৬ মিটার (২০ ফুট) চওড়া এবং ২০ মিটার (৬৫ ফুট) উচ্চ, গিজার স্পিংক্স মূর্তিটি পৃথিবীর প্রাচীনতম স্মারক ভাস্কর্য এবং প্রাচীন মিশরীয়রা খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে এটি নির্মান করেছিল বলে ধারনা করা হয়। গ্রেট স্পিংক্স পূর্ব দিকে মুখ করে তিন হাজার বছর ধরে আমাদের মাঝে রহস্য বিস্তার করে যাচ্ছে এবং এর দুইটি থাবার মধ্যে একটি ছোট মন্দির ঘর আছে।

(Naqsh-e Rustam)

 Naqsh-e Rustam

একজন আর্কিওলজিষ্ট বিশ্বাস করেন যে এটি পার্সেপলিস শহরের একটি কবরস্থান (দ্বিতীয় ইরানি শাসক বংশ “অ্যাকামেনিড” সাম্রাজ্রের রাজধানী। এটি শিরাজ শহর থেকে প্রায় ৭০ কিমি উত্তরপূর্বে অবস্থিত। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দিতে মহামতি আলেকজান্ডার পারস্য জয়ের পর এই শহর ধ্বংস করে দেন।) এখানে শুয়ে আছে অ্যাকামোনড, পার্শিয়ান ও সাসানড রাজ পরিবারে লোকেরা। থ্রিল তাই না ??
এখানে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে ইরানে।

(Church of St. George)

 Church of St. George

ইথিত্তপিয়া সাংস্কৃতিক ইতিহাস অনুযায়ী, কিং গেবরি মেসকেল ঘোষনা দেন যে, সেন্ট জর্জ এবং ঈশ্বর উভয়েই তাকে একটি চার্চ নির্মানের নির্দেশ দিয়েছেন। হেয়ার ইট ইজ !!!
12th শতাব্দীতে একটি শক্ত লাল আগ্নেয়শিলা কেটে এই চার্চ বানানো হয়েছে। এর আয়তন ২৫X২৫X৩০ মিটার।
2006 সালের হিসাবে, Lalibela এখনও একটি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ অর্থডক্স চার্চ Tewahedo সদস্যদের জন্য তীর্থস্থান । ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান “পাথর কুঁদে তৈরি চার্চ, Lalibela” এটি অন্তর্ভুক্ত।

(Abu Simbel)

Abu Simbel

আবু সিম্‌বেল (Arabic أبو سنبل or أبو سمبل) মিশরের দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনা, যা দুইটি বিশাল পাথর-নির্মিত মন্দির নিয়ে গঠিত। এটি আসওয়ান এর ২৯০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে লেক নাসের এর পাড়ে অবস্থিত।
এই স্থাপনাটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করেছে। আবু সিম্‌বেল সহ সম্পূর্ণ এলাকাটি নুবিয়ান মনুমেন্টস নামে খ্যাত।
মন্দিরদুটি শুরুতে তৈরি করা হয়েছিলো পাহাড়ের গা খোদাই করে। খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ শতকে ফারাও ২য় রামসেসের আমলে তাঁর ও রাণী নেফারতারির সম্মানে ও কাদেশের যুদ্ধ এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মন্দিরদুটি নির্মিত হয়। আরেকটি উদ্দেশ্য ছিলো প্রতিবেশি নুবিয়দের মিশরের জাঁকজমক দেখানো। বিংশ শতকে ১৯৬০ এর দশকে মন্দির দুটিকে সম্পূর্ণভাবে স্থানান্তর করা হয়, কেননা ঐ সময় নীল নদের উপরে আসওয়ান বাঁধ তৈরীতে সৃষ্ট লেক নাসের মন্দিরদুটির পূর্বের এলাকাকে গ্রাস করে নেয়া শুরু করে।
বর্তমানে স্থাপনাটি আসওয়ান বাঁধ এলাকার অনেক উপরে একটি কৃত্রিম পাহাড়ের উপরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আবু সিম্‌বেল মিশরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা।

(Mada’in Saleh)

Mada’in Saleh

আল-হিজর (“পাথুরে জায়গা”) আধুনিক সৌদি আরবের উত্তরে অবস্থিত একটি প্রাচীন শহর। এখানকার অধিবাসীদের হিগরা(Hegra) হিসাবে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে এটি তৈরি হয় যার তারিখ যা এলাকায় পাওয়া inscriptionsএ বর্ননা করা আছে। সৌদি আরবের সবচেয়ে দর্শনীয় টুরিষ্ট সাইট এটি এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক সাইটের একটি। এর স্থাপত্যকলা খুবই অসাধারন। এর লাইটিং সিষ্টেম দেখার মত। সবখানে আলো কিন্তু আলোর উৎস খুজে পাবেন না, খুব সুক্ষ ভাবে লুকানো। জর্দান সঙ্গে সীমান্ত জুড়ে উত্তরে অবস্থিত মাত্র ১৫০ মাইল দূর।

 (HAL-Saflien)

 HAL-Saflien

হাল-সাফ্লিনি একটি প্রাগঐতিহাসিক ভূগর্ভস্থ আশ্রয়স্থল বলে মনে করা হয়, কিন্তু এটা হয়ে ওঠে একটি কবরস্থান :( এটা শুধুমাত্র প্রাগৈতিহাসিক বিশ্বের ভূগর্ভস্থ মন্দির। এটা দুর্ঘটনা দ্বারা ১৯০২ সালে আবিষ্কিত হয় যখন একটি নতুন হাউজিং কম্পানীর শ্রমিকেরা মাটি কাটছিল তখন তারা এর ছাদ ফুটা করে ফেলে। শ্রমিকেরা তাদের এই আবিস্কার লুকানোর খুব চেষ্টা করেছিল কিন্তু লাভ হয়নি। এটি ১৯৯২ সালে পুনরূদ্ধার কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দর্শক যাও বন্ধ ছিল। যেহেতু এটি প্রতিদিন মাত্র ৮০ জনের ভিতরে যওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় এবং একটি টিকেট পেতে আপনাকে একটি ৪-৫ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
এটাই পৃথিবীর একমাএ প্রাগোইতিহাসিক ভূগর্ভস্থ মন্দির।

৭) Borobudur


অফিসিয়ালি Borobudur একটি নবম শতকের মহায়ানা বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ মাগেলেন্ড, সেন্ট্রাল জাভা, ইন্দোনেশিয়াতে অবস্থিত। বাস্তবিক, এটা অনেক পুরোনো. স্মৃতিস্তম্ভটিতে ছয় বর্গক্ষেত্র জটিল প্ল্যাটফর্মের শীর্ষস্থানে তিনটি বৃত্তাকার প্ল্যাটফর্ম আছে। এটি ২৬৭২ টি মুক্ত প্যানেল এবং রাম নাগরিকদের ৫০৪ টি মূর্তি দিয়ে সজ্জিত। একটি প্রধান গম্বুজ, শীর্ষ প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রে অবস্থিত যা ৭২ টি উপবিষ্ট রাম নাগরিকদের দ্বারা বেষ্টিত।

৮) Bingling Temple


প্রাকৃতিক গুহার ভিতরে অসংখ্য বুদ্ধের মূর্তি দিয়ে সাজানো এই দর্শনিয় জায়গাটি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে ইওলো রিভার,চায়না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ভূমিকম্প, ভূমিক্ষয় এবং স্মাগলিং এর কারনে অনেক শিল্পসম্মত কোষাগার ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরাপুরি ধ্বংস হয়েছে। তারপরও এতে ১৮৩টি গুহা, ৬৯৪টি পাথরের মূর্তি এবং ৮২টি মৃন্ময় ভাস্কর্য অবশিষ্ট আছে। প্রত্যেকটি গুহা বৌদ্ধ কল্পচিত্র দিয়ে ভরা মন্দিরে পরিনত হয়েছে।

৯) Buddhas of Bamiyan


বামিয়ান বুদ্ধ ছিল বুদ্ধের দাড়ানো ভাস্কর্য যা আফগানিস্তানের হাজারাত অঞ্চলের বালিয়ান উপত্যকা । ২৫০০ মিটার (৮২০২ ফুট)উচ্চতাযর এ মূর্তিটি কাবুলের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার (১৪৩ মাইল) দূরে অবস্থিত। ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত এই মূর্তিটির একটি খাড়া পাহাড়ের গা কেটে বডি বানানো হয় এবং অন্যান্য ডিটেইলস কাদা সঙ্গে খড় মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
২০০১ সালে তালেবান নেতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের আদেশে ডাইমাইট দিয়ে এ মুর্তিটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। কাঠ মোল্লারা এর পূনর্নির্মানেও বাধা দেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এটি পূনর্নির্মানে সহায়তা দিতে চেয়েছে কিন্তু কাঠ-মোল্লারা রাজি হয়নি।

১০) Mahabalipuram Shore Temple


Mahabalipuram মন্দির ভারতের মাহাবালিপুরামে, বঙ্গপোসাগরের একেবারে তীর ঘেষে অবস্থিত। এটি নির্মান করেছিলেন পাললাভা রাজা রাজাশিমাহা। ৮ম শতাব্দীর শুরুর দিকে নির্মিত মন্দিরটিতে দুটি কুটির আছে যার একটি পূর্ব(সমুদ্রমুখী) দিকে মুখ করে আছে অপরটি পশ্চিম দিকে।
১৩শত বছরের ঝড় ও যোয়ারের ঢেওয়ে মন্দিরটির ক্ষয় ও ধ্বংষ হয়ে যাওয়ার কথা হলেও এটি এখনো অক্ষত !! এই মন্দিরের উঠানে সমুদ্রের ঢেও এসে পরে।
মাহাবালিপুরাম ছিল পেরিপ্লাস এবং টলেমি (১৪০ খ্রিস্টাব্দ) শাষনামলের সময়ে একটি সমুদ্র বন্দর। একটি পুরোনো কিংবদন্তী বলে যে এখানে মূলত সাত মন্দির ছিল যার একটি এখন সমুদ্রের উপরে বাকি ৬ টি সমদ্র গহ্বড়ে। যার ধ্বংষাবসেস এখন পাওয়া যায়।

১১) Dazu Rock Carvings


ডাজু পাহাড় ভাস্কর্ টি চংকিং, চীনে। এখানে ৫০০০ মূর্তি এবং উপর ১০০০০০ চীনাদের অক্ষত ভাষ্কর্য আছে। এটি সিচুয়ান প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর নির্মান কাজ Tang বংশের আমনে শুরু হয় এবং মিং রাজবংশ(১৩৬৮-১৬৪৪) এবং চিং রাজবংশ(১৬১৬-১৯১১) পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

১২) Cappadocia


ক্যাপাডোসিয়া তুরস্কের মধ্য-পশ্চিমা অবস্থিত। সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি লক্ষ লক্ষ বছর আগে আগ্নেয়গিরির লাভা, বাতাস ও জলের সম্মিলিত ব্যবহার করে তৈরি। এখানে সংস্কৃতি ও একটি ধর্মগোষ্ঠির পরিচয় পাওয়া যায়।: এখনে আদরা কক্ষ, প্রাসাদ, এমনকি পুরো পাথরের গ্রাম বাইরে কনস্ট্যাণ্টিনোপলের আমলের পেইন্টিং গীর্জা এবং মঠও পাওয়া যায়।

১৩) Mount Rushmore


এটি হয়তো সবাই দেখে থাকবেন। বিখ্যাত এই স্মারক ভাস্কর্য নির্মান করেন Gutzon Borglum। মাউন্ট রাশমোর দ্বারা নির্মিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিদের স্মারক চিন্হ হিসাবে। (বাম থেকে ডানে): জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, থিওডোর রুজভেল্ট, এবং আব্রাহাম লিঙ্কন. সম্পূর্ণ স্মারকটি ১২৭৮.৪৫ একরের (৫.১৭ km2) এর উপর এবং সমুদ্রতল থেকে ৫৭৭২৫ ফুট (১৭৪৫ মিটার) উপরে। স্মারকটি দেখতে বছরে প্রায় দুই মিলিয়ন লোক আসে।

১৪) Petra


এটা আপনেরা দেখেছেন ”Indiana Jones and the Last Crusade”, ”Mortal Kombat: Annihilation” and ”Sinbad” and ”the Eye of the Tiger” মুভি তে।
এটি জর্দানে অবস্থিত। এটি ২১শত বছর আগে একটি রাজধানী শহর ছিল। ১৮১২ সাল পর্যন্ত এটি মানুষের চোখ থেকে লুকিয়া থাকতে পরেছে এবং ইন্ডিয়ানা যোন্স মুভির কল্যানে এটি পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠে। “ডেড সি” এর কাছে এটি একটি “ডেড সিটি”।

(Leshan Giant Buddha)

Leshan Giant Buddha


ট্যাং রাজার শাসনামলে এটি নির্মিত। এটি ৭২ মিটার উচু। তিনটি নদীর মোহনায় এটি অবস্থিত। চীনা সরকার চেষ্টা করছে এটি রক্ষনাবেক্ষন করতে। জায়গাটা খুব দূর্গম এবং দূষনের শিকার।

শেয়ার করুন

Author:

A dedicated government professional with a passion for photography, book reading, and traveling. Holding a Bachelor of Social Science (BSS), I am also a professional graphics designer with extensive experience in the field. When I'm not working, I enjoy blogging to share my thoughts and experiences with a wider audience.