রাজবংশীরা মূলত কৃষিজীবী, তবে মাছধরা এবং মাছ বিক্রয় এদের অন্যতম পেশা। মেয়েরা কুটির শিল্পের কাজে দক্ষ। পিতাই পরিবারের প্রধান। পিতার মৃত্যুর পর পুত্রসন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। তাদেরকে ধর্মীয় আচারে শৈব বলে মনে করা হলেও শাক্ত, বৈষ্ণব, বৌদ্ধ, তান্ত্রিক প্রভৃতি বিশ্বাসের সমন্বয়ে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে। তারা মহাকাল শিব, বিষহরী (মনসা)র আরাধনা করেন এবং একই সঙ্গে দুর্গা, কালী (শ্যামা), লক্ষ্মী, জগন্নাথ, নারায়ণ, বিষ্ণু প্রভৃতি দেবদেবীরও পূজা করে। দেবদেবীর পূজার পাশাপাশি প্রাচীন কৃষিসংস্কৃতির প্রতীক ‘বারিধারা’ ব্রত কিংবা উর্বরতা ও প্রজননের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্রত বা অনুষ্ঠানাদি পালন করে। এরা প্রকৃতি উপাসকও বটে এবং পাহাড়, নদী, অরণ্য ও মৃত্তিকার পূজা করে থাকে। এরা ঘর-সংসারের মঙ্গল কামনায় বাস্ত্তদেবতা বাহাস্তো বা বাহুস্তো এবং শস্য রোপণের পূর্বে বলিভদ্র ঠাকুরের পূজা করে। এদের পূজা-পার্বণে নৃত্যগীতোৎসব আদিবাসীসুলভ সামাজিক প্রথারূপেই ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। খরা, অনাবৃষ্টি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘হুদুমা’ পূজা রাজবংশীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
রাজবংশী নারীদের ব্যবহৃত গহনা
রাজবংশীদের কোন লেখ্য ভাষা বা বর্ণমালা নেই। এদের ভাষা স্থানিক তথা আঞ্চলিক ভাষার এক
মিশ্ররূপ। এরা যে আঞ্চলিক মিশ্র ভাষায় কথা বলে তা কারও কারও বিচারে ‘বিকৃত’ বাংলা।
রাজবংশীদের বিবাহ প্রথায় সাঁওতাল, ওরাওঁদের বিবাহরীতির প্রভাব যথেষ্ট। বিবাহ বিচ্ছেদ,
পুনর্বিবাহ ও বিধবা বিবাহ সমাজে প্রচলিত। তবে বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে দেবরদের দাবি
অগ্রগণ্য। রাজবংশীরা মৃতদেহ পুড়িয়ে সৎকার কাজ সম্পন্ন করে। একমাস পর মৃত ব্যক্তির
জন্য শ্রাদ্ধকর্ম অনুষ্ঠিত হয়।
রাজবংশীদের ব্যবহৃত কৃষিযন্ত্র
তথ্যসুত্রঃ আহমদ রফিক (বাংলাপিডিয়া),
ছবিঃ সংগ্রহ
0 coment rios:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন